সেভ আর্থ সেভ বাংলাদেশ সিজন-৩

সেভ আর্থ সেভ বাংলাদেশ সিজন-৩

সারা বাংলাদেশে তথা সারা বিশ্বে প্রতিনিয়ত যে পরিমান প্লাস্টিক বোতল, সিগারেট ফিল্টার, প্লাস্টিক মোড়ক ছুড়ে ফেলা হচ্ছে এবং এর জন্য যে পরিমান বৃক্ষনিধন করা হচ্ছে তার ফলাফল অত্যন্ত ভয়বহ বৃক্ষনিধন ও প্লাস্টিক বর্জ্য যত্রতত্র ছুড়ে ফেলার ফলে আমাদের ভবিষ্যৎ পৃথিবী পরিনত হবে আমাদের এই প্লাস্টিক রাজ্যের মতোই।


গাছের গুড়ি ও মাছের প্রতিকৃতিঃ


প্রতি বছর সারাবিশ্বে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন বৃক্ষ নিধন করা হয় শুধু মাত্র সিগারেট উৎপাদনের জন্য। যার প্রতীকী স্বরূপ ৬ টি বৃহৎ আকৃতির গাছের গুড়ির উপর নির্মিত হয়েছে স্থাপত্য। প্রথমেই একটি নদীর মাছ। মাছে ভাতে বাঙালী এই প্রবাদটি বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্য বহন করে। অথচ আমাদের অসচেতনতা ও অপরিচ্ছন্ন মানসিকতার কারনে আজ আমরা আমাদের মাছে ভাতে বাঙালীর ঐতিহ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছি। কিন্তু আজ যত্রতত্র ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বোতল, প্যাকেট, ফিল্টার থেকে নির্গত দূষিত কেমিক্যাল দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মাছের প্রজনন, হারাচ্ছে তার স্বাদ এবং মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে এর যথাযথ পুষ্টিগুন থেকে। যারই প্রতীকী হিসেবে নির্মিত এই মাছের প্রতিকৃতি।





গ্রেনডের প্রতিকৃতিঃ

আমদের অসচেতনতা ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভুল এর ফলে একদিন আমাদেরই এই আদরের, ভালোবাসার পৃথিবী পরিনত হবে প্লাস্টিক নামক ভয়াবহ গ্রেনেডের রূপে। যার মূল উপকরন হচ্ছে এই সমস্ত প্লাস্টিক বর্জ্য যার বিস্ফোণের ভয়াবহতায় ক্ষতিগ্রস্থ হবে সমগ্র দেশ সমগ্র জাতি এবং সমগ্র পৃথিবীর মানুষ।
মস্তিষ্কের প্রতিকৃতিঃ


সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে মানব মস্তিষ্কে প্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। মূলত মাইক্রো প্লাস্টিক রক্তের মাধ্যমে মাত্র ১ সপ্তাহের মধ্যে মানব মস্তিষ্কে নিজেকে বিকশিত করতে পারে। এছাড়াও বাতাসে ভাসমান ন্যানো প্লাস্টিক শ্বাস-প্রশ্বাস এর মাধ্যমে আমাদের দেহে প্রবেশ করে হৃদপিণ্ড ও ব্রেইনে পৌঁছাতে পারে। ফলস্রুতিতে এই মাইক্রো প্লাস্টিক আমাদের দেহে বিদ্যমান রোগ গুলোকে আরো বেশি প্রবল ও তীব্র করে, ডিএনএ এর মধ্যে পরিবর্তন আনয়ন করে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্রেইন ক্যান্সারের কারন হিসেবে প্রতিয়মান হয়। এছাড়াও খাদ্যের মাধ্যমেও প্লাস্টিক ও সিগারেট ফিল্টার থেকে নির্গত দূষিত কেমিক্যাল মানব দেহ তথা মস্তিষ্কে পৌঁছে আমাদের ক্ষতি সাধন করে। অজানা এই ক্ষতির ভয়াবহতা সম্পর্কে আমার এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সচেতন করতেই নির্মিত এই প্রতীকি মানব মস্তিষ্ক।


কচ্ছপ এর প্রতিকৃতিঃ

আমাদের পৃথিবীর মোট ১ ভাগ স্থল ও ৩ ভাগ জল। যার একটি বৃহৎ অংশ হচ্ছে সমুদ্র। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সামুদ্রিক প্রাণীর ভূমিকা অপরিহার্য। শুধুমাত্র প্লাস্টিক বর্জ্যের কারনে প্রতি বছর প্রায় ১০০ মিলিয়ন সামুদ্রিক প্রাণী মৃত্যুবরন করে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সামুদ্রিক প্রাণী হচ্ছে কচ্ছপ। খাদ্য অথবা শিকার হিসেবে প্লাস্টিক বর্জ্যা ভুল করে খাওয়ার পর এই সামুদ্রিক প্রাণিকুল মৃত্যুবরন করছে। সামুদ্রিক প্রাণীকুলের এই ক্ষতিকর ভয়াবহতা তুলে ধরতেই তৈরি করা হয়েছে এই কচ্ছপ প্রতিকৃতি।

সিগারেট ফিল্টার এর প্রতিকৃতিঃ


পরিবেশে প্রাপ্ত সবচেয়ে বেশি এবং সবচেয়ে দূষিত পরিত্যক্ত পদার্থ হচ্ছে সিগারেট ফিল্টার। যা নিরবে ধ্বংস করেছে আমাদের পরিবেশ, জলবায়ু ও প্রতিবেশ। প্রতিবছর প্রায় ৫.৪ ট্রিলিয়ন সিগারেট উৎপন্ন হয় যার মধ্যে প্রায় ৪.৫ ট্রিলিয়ন সিগারেট ফিল্টার বর্জ্য আকারে নিক্ষিপ্ত হয় পরিবেশে। যার থেকে নির্গত হয় নিকোটিন, টার এবং আর্সেনিকের মতো ক্ষতিকর আরো প্রায় ৭০০০ কেমিক্যাল, যা মাটি, পানি, বায়ুমণ্ডলকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে প্রতিনিয়ত। সিগারেট ও সিগারেটের ফিল্টার এর ভয়াবহতার প্রতীকি হচ্ছে এই অর্ধ নিমজ্জিত সিগারেট ফিল্টার।



 


মা ও বোতলঃ


মঞ্চে অবস্থিত বোতলটিকে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন যা মূলত মঞ্চের নান্দনিক সৌন্দর্য তুলে ধরার জন্য তৈরি করা হয়েছে। যেহেতু এই প্রদর্শনীটি একটি প্লাস্টিক বর্জ্যের ভয়াবহতা ও প্লাস্টিক ব্যবহারের পরবর্তী সচেতনতা সম্পর্কিত প্রদর্শনী তাই এটির গুরুত্ব তুলে ধরতেই এই বৃহৎ আকৃতির প্রতীকি প্লাস্টিক বোতলটি নির্মান করা হয়েছে।


পাতাহীন বটগাছ এর প্রতিকৃতিঃ


প্রদর্শনীর মূল আকর্ষণ এই বটগাছ। মুলত এই বট গাছটিকে "প্রকৃতির মা" হিসেবে প্রতিয়মান করা হয়েছে। মা যেমন তার সন্তানকে গর্ভে ধারন করে নিঃস্বার্থভাবে তার লালন পালন করে সকল দুঃখ কষ্ট নির্বিঘ্নে ও নিশ্চুপে সহ্য করে সকল বিপদে ঢাল হয়ে আগলে রাখে ঠিক তেমনিভাবে বটবৃক্ষ শত শত বছর ধরে তার বিশালতা দিয়ে আগলে রাখছে এই ধরিত্রিকে। অথচ আমরা সেই মায়ের সন্তানেরা অসচেতনতায়, অজ্ঞতায় ও সেচ্ছাচারীতায় যত্রতত্র প্লাস্টিক নামক বিষক্রিয়া মাটিতে নিক্ষেপ করে নষ্ট করছি মাটির উর্বরতা, ব্যাহত করছি গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি, পৌঁছে দিচ্ছি ফলমূলে এর বিষক্রিয়া এবং বাধ্য করছি মাতৃস্বরূপ বটবৃক্ষকে পত্রবিহীন বটবৃক্ষে পরিনত হতে।


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও জননেত্রী শেখ হাসিনার চিত্রকল্পঃ


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি সুজলা সুফলা শস্য শ্যামল সোনার বাংলাদেশের। জাতির পিতার সেই স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। অথচ আমাদেরই অসচেতনতা ও অজ্ঞতার কারনে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের গতিশীল ধারাকে ব্যাহত করছি প্রতিনিয়ত ঘটাচ্ছি পরিবেশের মারাত্বক বিপর্যয় ডেকে আনছি জাতির জন্য এক ভয়াবহ ভবিষ্যৎ। আর এই ভয়াবহ ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করেই অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছেন সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এবং সোনার বাংলা গড়ার কারিগর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।


পরিশেষে, আমার বলতে চাই, আমরা শুধু সামনের দিকেই এগুতে পারি।


আমরা নতুন দরজা খুলতে পারি, নতুন আবিষ্কার করতে পারি কারণ আমরা কৌতূহলী। আর এই কৌতুহলই আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা"


বিডি ক্লিন


"সেভ আর্থ সেভ বাংলাদেশ সিজন-৩"


"প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার নিষেধ করছি না, বরং বলছি প্লাস্টিক বর্জ্য সম্পর্কে হতে সচেতন"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Bangladesh History